বিনোদন প্রতিবেদক:
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে মঙ্গলবার বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি চিত্রনায়িকা পরীমনি। ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তোলার পর পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করলেও এদিন পুলিশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি। চিত্রনায়িকা পরীমনিকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে গত মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে নেওয়া হয়।
পরীমনিকে নির্যাতনের অভিযোগের ঘটনাস্থল ঢাকা বোট ক্লাবের ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ বলছে, সেখানে ঢোকার প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা পর এই চিত্রনায়িকাকে ‘ধরাধরি’করে বের করতে হয়েছে। পুলিশ বলছে, সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই রাতে বোট ক্লাবের ভেতরে কিছু একটা ঘটেছে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, “কালো রঙের একটি গাড়িতে ওই রাত ১২টা ২২ মিনিটে পরীমনি ক্লাবে ঢোকেন, আর বের হন ১টা ৫৯ মিনিটে। বের হওয়ার সময় তাকে দু’জন চ্যাংদোলা করে বের করতে দেখা যায়।
নগরীর অদূরে বিরুলিয়ায় অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে ওই রাতের ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন এমন আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কালো রঙের গাড়ি থেকে নেমে স্বাভাবিকভাবে হেঁটেই বোট ক্লাবে ঢুকতে দেখা যায় পরীমনিকে। কিন্তু এক ঘণ্টা ৩৭ মিনিট পর তার হাত ও পা ধরে দু’জন ধরাধরি করে সাদা রঙের একটি গাড়িতে তুলে দেন“ ৮ জুন মাঝরাতের ঘটনার ছয়দিন পর সোমবার পরীমনি সাভার থানায় ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গোয়েন্দা পুলিশ ওই দিনই এই দু’জনসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে এই দুজন মাদক মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। মাদক মামলায় নাসির ও অমি গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকলেও জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওই রাতের ঘটনার বর্ণনায় পরীমনির গালে থাপ্পড় এবং মাটিতে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য মারামারির কথা দুজনই স্বীকার করেছে।
বোট ক্লাবের যে বারে পরীমনির অভিযোগ অনুসারে ধর্ষণচেষ্টা ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে সেই ‘বারে’ কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। তাই পুলিশের হাতে থাকা ভিডিও ফুটেজে ওই রাতে আসলে কী ঘটেছিল সেই চিত্র নেই। তবে ওই বারে পরীমনির সঙ্গে থাকা তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি মোবাইল ফোনে ১৫ সেকেন্ডের ধস্তাধস্তির একটি ভিডিও করেছিলেন। এতে ভরাট পুরুষ কণ্ঠে গালমন্দ ও হই-হুল্লোর শোনার কথা বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বোট ক্লাবের ভেতরে ওই রাতে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ঠিক কী হয়েছে তা জানতে ক্লাবের স্টাফসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি বলেন, পরীমনি বনানী থানায় আসেন রাত ৩টা ৫২ মিনিটে। সেই সময় তিনি হেঁটেই থানায় ঢোকেন। এই চিত্রনায়িকার করা মামলা তদন্ত করছেন সাভার থানা পুলিশের পরিদর্শক মো. কামাল হোসেন।
সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল বলেন, পুলিশ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে। পুরোপুরি তদন্ত শেষে জানানো হবে। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী আরও বলেন, ভেতরের বারে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। তাই ভেতরের চিত্র পাওয়া যায়নি। বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাসির কখন ক্লাবে ঢুকেছেন জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সেই সময়টা বের করার চেষ্টা করছি। তবে সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজে নাসিরকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। তার অর্থ নাসির আগের থেকেই ভেতরে ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাত১২টা ২২ মিনিটের দিকে ক্লাবের সামনে একটি কালো গাড়ি থামে। গাড়িটি ছিল অমির। এটির সামনের দরজা থেকে নামেন পরীমনি। পেছনের ডান পাশের দরজা দিয়ে বের হন অমি, কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও একজন নারী। রিসিপশনের ক্যামেরায় তাদের চারজনকে একসঙ্গে বারে ঢুকতে দেখা যায়। ওই রাত ১টা ৫৯ মিনিটে পরীমনিকে চ্যাংদোলা অবস্থায় বের করেন দুজন।
পুলিশ জানায়, এই দুজনের একজন জিমি ও একজন সিকিউরিটি গার্ড। পেছনে যে নারীকে দেখা গেছে তার নাম বনি এবং তার পেছনে ছিলেন অমি। বনি অভিনেত্রী পরীমনির বোন বলে তিনি মামলায় উল্লেখ করেছেন। চিত্রনায়িকা পরীমনিকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে গত মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে নেওয়া হয়। মামলার এজাহারে পরীমনি অভিযোগ করেছেন, পূর্ব পরিচিত অমি ৮ জুন রাতে তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ বর্তমান বাসা থেকে বোট ক্লাবে নিয়ে যান এবং সেখানে নাসির তাকে ‘ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ওই রাতে সঙ্গীয়দের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে প্রায় অচেতন অবস্থায় রক্ষা পান। ঘটনার চারদিন পর শনিবার রাতে প্রথমে ফেইসবুকে এবং পরে বনানীতে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি এমন অভিযোগ